নিকলী হাওর:
হাতে একদিন সময় নিয়ে ঢাকা থেকে খুব অল্প বাজেটের মাঝেই ঘুরে আসুন কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী হাওর থেকে। হাওড়ের দ্বিগন্ত বিস্তৃত স্বচ্ছ জলরাশির বুকে নৌকায় ঘুরে বেড়ানো, পানির মাঝে জেগে থাকা দ্বীপের মত গ্রাম, রাতারগুলের মত ছোট জলাবন, হাওড়ের তাজা মাছ ভোজন। সব মিলিয়ে একদিনের ট্যুরের জন্য আদর্শ একটি জায়গা। জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট প্লেসগুলোতে মানুষের ভিড়ে যখন অতিষ্ট, সেক্ষেত্রে কিশোরগঞ্জ জেলার এই নিকলী হাওর আপনাকে দেবে নিজের মত করে নিরিবিলিতে ঘুরে বেড়ানোর জন্য সুন্দর একটি দিন। ইচ্ছে হলে বড় নৌকা ভাড়া নিয়ে রাতে নৌকায় থাকার ব্যবস্থা আছে।
একদিনের প্ল্যান
যেখান থেকে আসেন কিশোরগঞ্জ নামিয়ে দেবে। কিশোরগঞ্জ স্টেশান থেকে নিকলি হাওড় সিএনজিতে যেতে সময় লাগবে একঘন্টা। যেখানে সিএনজি নামিয়ে দেবে, পাশেই কিছু হোটেল পাবেন মোটামুটি মানের। হাওড়ের ফ্রেশ মাছ দিয়ে লাঞ্চ সেরে ঘাট থেকে দরদাম করে নৌকায় উঠে যাবেন। হাওড়ে ঘুরে সন্ধ্যার মাঝে ঘাটে ফিরে আসবেন। নিকলি থেকে কিশোরগঞ্জ ফিরে রাতের বাসে ঢাকায়।
কখন যাবেন:
বর্ষার শেষে এখনই হাওড় ভ্রমণের উপযুক্ত সময়।
কোথায় থাকবেন :
নিকলীতে কোনো আবাসিক হোটেল নেই। রাতে থাকতে চাইলে যেতে পারেন কিশোরগঞ্জে। গাঙচিল, শ্রাবণী আর আল-মুসলিমের মতো উন্নত হোটেলগুলোতে থাকতে পারেন।
খরচ
ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ ট্রেনে ১৭৫ টাকা / বাস ভাড়া ২০০ টাকা। কিশোরগঞ্জ থেকে নিকলি সিএনজি ভাড়া ১০০ টাকা প্রতিজন।
মিঠামইন হাওর (Mithamain Haor) কিশোরগঞ্জে অবস্থিত হাওর গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হাওর। বর্ষাকালে এই হাওর পর্যটকদের আকর্ষন করলেও সম্প্রতি চালু হওয়া অল ওয়েদার সড়কের (All Weather Road) কল্যাণে মিঠামইন হাওর এখন পর্যটকদের কাছে হট ফেবারিট একটা জায়গা। নিকলি, অষ্টগ্রাম, ইটনা হাওরের হাওরের পাশাপাশি এখানকার আরেকটি দৃষ্টিনন্দন হাওর হচ্ছে এই মিঠাইন হাওর যা মিঠামইন উপজেলায় অবস্থিত। দিগন্তবিস্তৃত হাওরের জলরাশি যেকোনো প্রকৃতিপ্রেমীর মনে আনন্দের ঢেউ তুলবে। মিঠামইন হাওরের উত্তরে ইটনা ও আজমিরিগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণে অষ্টগ্রাম উপজেলা, পূর্বে বানিয়াচং ও অষ্টগ্রাম, পশ্চিমে করিমগঞ্জ ও নিকলী উপজেলা। হাওরবেষ্টিত এ জনপদে থইথই পানি থাকে পাঁচ থেকে ছয় মাস। পানি নেমে যাওয়ার পর সবুজ পালকে ভরে উঠে পুরো হাওর। সারা বছর হাওরের সৌন্দর্য অটুট থাকলেও মূলত বর্ষাকালই ভ্রমণপিপাসুদের মূল আকর্ষণ। হাওরে দেশের প্রকৃতিপ্রেমিকদের ভিড় হয় বর্ষায়। ভ্রমণের সেরা সময়: মিঠামইন হাওর ভ্রমণের উপযুক্ত সময় জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর। যদিও শুকনা মৌসুমের হাওরের সৌন্দর্য্য অন্য রকমের সুন্দর। যাওয়ার উপায়: ঢাকার মহাখালী থেকে অনন্যা পরিবহনের বাস ছাড়ে ৫ মিনিট পরে পরে, ভাড়া ২০০ টাকা। যারা সায়েদাবাদ থেকে যেতে চান তাঁরা অনন্যা সুপার বাস পাবেন। সাড়ে তিন থেকে চার ঘণ্টায় কিশোরগঞ্জ বাস স্ট্যান্ড পৌছে যাওয়া যাবে। এরপর বাস স্ট্যান্ড থেকে ১০ টাকা দিয়ে ইজি বাইকে চলে যেতে পারবেন স্টেশন রোড। সেখান থেকে ৪০ টাকায় সি.এন.জি অটোতে চামড়া বন্দর, সময় লাগবে প্রায় ঘন্টাখানেক। এই চামড়া বন্দরকে কিশোরগঞ্জের ভাটি অঞ্চলের অন্যতম হাব বলা যায়। ইটনা, মিঠামইন, নেত্রকোনার খালিয়াজুরী ইত্যাদি অঞ্চলের নৌযানগুলো এই বন্দর থেকেই ছাড়ে।
কুতুব মসজিদ বা কুতুব শাহ মসজিদ কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলায় অবস্থিত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও বাংলাদেশের একটি প্রাচীন মসজিদ। মসজিদটি সুলতানী আমলে নির্মিত বলে ধারণা করা হয়। কুতুব মসজিদটি আবিষ্কারের সময় এটিতে কোন শিলালিপি পাওয়া যায়নি বলে এর সঠিক নির্মাণকাল সম্পর্কে তেমন ধারণা পাওয়া যায় না। তবে স্থাপত্য রীতি ও আন্যান্য দিক বিবেচনা করে প্রত্নতত্ত্ববিদগণ ধারণা করেন এটি ১৬শ শতকে সুলতানী আমলে নির্মাণ করা হয়েছে। মসজিদটির পাশেই একটি কবর রয়েছে যা কুতুব শাহ-এর বলে ধরণা করা হয়ে থাকে। তার নামানুসারে মসজিদটিকে কুতুব মসজিদ বা কুতুব শাহ মসজিদ বলে ডাকা হয়। ১৯০৯ সালে তৎকালীন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এটিকে সংরক্ষিত হিসেবে নথিভুক্ত করে।
চারকোণা কুতুব মসজিদের ৪টি কোণেই রয়েছে ৪টি বুরুজ যা অষ্টভূজাকৃতি। এটি উত্তর-দক্ষিণ দিকে লম্বা ও পূর্ব-পশ্চিমে প্রশস্ত। অষ্টভূজাকৃতি বুরুজের উপর রয়েছে ৪টি মিনার। এছাড়াও মসজিদটিতে রয়েছৈ মোট ৫টি গম্বুজ। পশ্চিম দেয়াল ব্যতীত এর তিনটি দেয়ালেই প্রবেশপথ রয়েছে মোট ৫টি যার মধ্যে পূর্বে রয়েছ ৩টি।
কুতুব মসজিদের বাইরের দেয়ালে বিভিন্ন নকশা করা রয়েছে। সুলতানী আমলের এ মসজিদটির ছাদের কার্নিশ বক্রাকার। তৎকালীন ময়মনসিং অঞ্চলের এটিই টিকে থাকা সুলতানী আমলের সবচেয়ে প্রাচীন মসজিদ বলে ধারণা করা হয়।