নাগরিক জীবনে যখন ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত তখন নিরিবিলি নির্জনতায় খানিকটা সজীবতা খুঁজে পেতে ভ্রমণের বিকল্প নেই। যাদের ঘোরার জন্য হাতে সময় কম, তারা হুট করে চাইলেই কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি চলে যেতে পারেন না। তাদের জন্য গাজীপুরই আদর্শ ভ্রমণ গন্তব্য। ঢাকার এত কাছে গাজীপুরেই এত মনোরম সজ্জায় বিভিন্ন রিসোর্ট গড়ে উঠেছে চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। এসকল রিসোর্টের মাঝে অনন্য এক রিসোর্ট হলো সাবাহ গার্ডেন রিসোর্ট। অপরূপ সুন্দর গ্রামীণ দৃশ্যমাখা পরিবেশে গড়ে উঠা এই রিসোর্ট তার অনন্য নান্দনিকতার জন্য জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সাপ্তাহিক ছুটির ফাঁকে আপনিও চাইলে ঘুরে আসতে পারেন চমৎকার এই রিসোর্টটি থেকে।
ঢাকার অদূরে গাজীপুরের বাঘেরবাজার এলাকায় সাবাহ গার্ডেন রিসোর্ট অবস্থিত। ৩৬ বিঘা জমির ওপর নির্মিত এ রিসোর্টটির রয়েছে বাড়তি সৌন্দর্য এবং বিশেষত্ব। দারুণ প্রাকৃতিক পরিবেশে ঘেরা এই রিসোর্টটিতে নিরিবিলিতে কাটাতে পারবেন অসাধারণ কিছু মুহূর্ত। এই রিসোর্টের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে বই। এটি এমন একটি রিসোর্ট যেখানে আছে পাঠাগার! বিশ্বের বিভিন্ন বিখ্যাত লেখকের বই রিসোর্টটিকে ভিন্ন রূপ এনে দিয়েছে। বই প্রেমীদের খুবই ভালো লাগবে জায়গাটি। নানান সব বিখ্যাত বইয়ের মাঝে সহজেই কেটে যাবে আপনার অবসর। প্রকৃতির সঙ্গে বিনোদন, বই এর ভাঁজে ভাঁজে আনন্দ। আর কি লাগে সুন্দর এক অবকাশ যাপনে! বিশ্বের বিখ্যাত ব্যক্তিদের বিখ্যাত বাণী দিয়ে পুরো রিসোর্টটি সাজানো হয়েছে, যা যে কোনো মানুষের জীবনের জন্যই দিক নির্দেশনা সেইসব চমৎকার বাণীগুলো দেখতে পাবেন পুরো রিসোর্টের দেয়ালগুলোতে।
খরচ:
রিসোর্টটির কটেজগুলোর পাশাপাশি পুরো রিসোর্টটিও পিকনিক বা অন্যান্য অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া নিতে পারবেন। ভাড়া পড়বে ৬০-৭০ হাজার টাকা।
যোগাযোগ: ০২-৫৫০৩৫১৯৪, ০১৭১১৮৭৩৮৯৫।
যাওয়ার উপায়:
নিজস্ব পরিবহন বা যাত্রীবাহী বাসে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বাঘেরবাজার আসতে হবে। এখানেই রিসোর্টটি অবস্থিত।
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার রাজবাড়ি এলকায় শিল্পীদম্পতি তৌকির-বিপাশা গড়ে তুলেছেন নক্ষত্রবাড়ি রিসোর্ট। প্রায় ২৫ বিঘার জায়গাজুড়ে তৈরি এই অবসর যাপনকেন্দ্রে আছে দিঘি, কৃত্রিম ঝরনা, সভাকক্ষ, সুইমিংপুলসহ নানান সুবিধা। নক্ষত্রবাড়ী প্রকৃতিপ্রেমী ও ভ্রমণপিপাসুদের কাছেও অতি জনপ্রিয় নাম। এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, পুকুরের পানির ওপর কাঠ-বাঁশের সমন্বয়ে নির্মিত ১১টি কটেজ। যার বারান্দায় বসে রাতের জোছনা বা পূর্ণিমা দেখা যায়। শুধু তাই নয়, প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে, অতি সৌন্দর্যের কটেজ এগুলো। এখানে বসে শোনা যায় ব্যাঙের ডাক, ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক, জোনাকির আলো ছড়ানো টিপ টিপ বাতি জ্বলা-নিভা। পুকুরের পশ্চিম পাশের পানির ওপর গজারী গাছ দিয়ে নির্মিত এসব কটেজ। কটেজ গুলোর ওপর রয়েছে ছনের ছাউনি। পুকুরের পূর্ব পাশে ব্রিটিশ আমলের দরজা-জানালা সংবলিত একটি ঘর রয়েছে। একটু পুবে রয়েছে সুইমিং পুল। রয়েছে আরও একটি বিল্ডিং কটেজ। রয়েছে একটি কনফারেন্স রুম ও খাবার হোটেল। আর এই হোটেলে রয়েছে বাংলা, চাইনিজ, ইন্ডিয়ান, থাই, কন্টিনেন্টাল খাবার। এখানে বিভিন্ন ধরনের গাছ-গাছালি রয়েছে। এখানে সার্বক্ষণিক ৪০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন।
ভাড়া:
দর্শনার্থীদের জন্য প্রবেশ মূল্য ৫০০ টাকা। দর্শনার্থীরা রিসোর্ট প্রবেশ করে নিজের পছন্দ মতে পানির ওপর কটেজগুলো বা বিল্ডিং কটেজের গুলো ভাড়া করে নিতে পারেন।
যাওয়ার উপায়:
নিজস্ব পরিবহন বা যাত্রীবাহী বাসে করে গাজীপুর চৌরাস্তা হয়ে ঢাকা-কাপাসিয়া মহাসড়কের রাজাবাড়ী বাজারে নামতে হবে। পরে রাজাবাড়ী বাজার থেকে দেড় কিলোমিটার দক্ষিণে চিনাশুখানিয়া গ্রামের বাঙালপাড়া এলাকায় নক্ষত্রবাড়ী রিসোর্ট (Nokkhottrobari Resort) এর অবস্থান যা কাপাসিয়া-শ্রীপুরের সীমানা বেষ্টিত এলাকা।
রাঙামাটি ওয়াটার ফ্রন্ট রিসোর্ট ও বনভোজন কেন্দ্রটি ঢাকা শহরের খুব কাছে গাজীপুরের চন্দ্রায় অবস্থিত। নাম রাঙ্গামাটি বলে অনেকেই প্রথমে ভেবে থাকেন রাঙ্গামাটি? সেতো অনেক দূর! আসলে রাঙ্গামাটি জেলার নামের সাথে মিল রেখে এই অবকাশ কেন্দ্রের নামকরন করা হয়েছে রাঙ্গামাটি ওয়াটার ফ্রন্ট রিসোর্ট। এখানে আছে বনভোজন কেন্দ্র, লেকে মাছ ধরা ও বেড়ানোর ব্যবস্থা এবং কটেজে অবকাশ যাপনের ব্যবস্থা। চারপাশে শালগাছে ঘেরা। এখানে আছে একটি মুক্তমঞ্চ। আছে লেকে নৌ-ভ্রমণের ব্যবস্থা, আছে সুইমিং পুলে শরীর ভিজানোর সুযোগ। পিকনিক স্পট আছে। অন্য সব খাবারের সঙ্গে তন্দুরি আর কাবাবও পাবেন। কটেজ আছে সাতটি, দোতলা ভবন আছে আরো আটটি। সব কক্ষ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত।
রাঙামাটি ওয়াটার ফ্রন্ট রিসোর্টটি (Rangamati Waterfront Resort) মুলত পারিবারিক ও কর্পোরেট পিকনিকের জন্য বিশেষ ভাবে প্রস্তুত করা। কামিনি, যামিনি, বিজ ফিল্ড ও এমফি থিয়েটার নামে ৪টি পিকনিক স্পট রয়েছে এখানে। প্রত্যেকটি স্পটে রয়েছে আদালা আলাদা খেলার মাঠ ও রান্না জায়গা। পুরো রিসোর্টের চার পাশে রয়েছে ঘন সবুজ অরন্য, নিরিবিলি পরিবেশ, শিশুদের খেলার জায়গা।
আরও রয়েছে-
পিকনিক স্পট
মিউজিক ইভেন্ট
বার-বি-কিউ কর্নার
লাভ কর্নার
কিভাবে যাবেন:
ঢাকার মহাখালী বা ফার্মগেট থেকে বাসে করে যাবেন চন্দ্রায়। তারপর চন্দ্রায় থেকে টেম্পো বা রিকশা করে টাঙ্গাইল রোড ধরে যেতে হবে রাঙমাটি-ওয়াটার-ফ্রন্টে।
অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি হওয়ায় এই রিসোর্টের নামকরণ করা হয়েছে অঙ্গনা। গ্রামীণ সৌন্দর্যের বেসরকারি রিসোর্টস অঙ্গনার মালিক উপমহাদেশের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লার ভাই সৈয়দ আলী মুরাদ ২০০৪ সালে ১৮ বিঘা জমির ওপর এটি নির্মাণ করেন।
এই রিসোর্টটি পুরো এলাকা ঘিরে একটি শক্তিশালী নিরাপত্তা বেষ্টনীতে ঘেরা। এই নিরাপত্তার স্বার্থে সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে পুরো রিসোর্ট এলাকায়। প্রাকৃতিকভাবে সাজানো বাগান। এখানে রয়েছে দুটি খেলার মাঠ, রয়েছে দুটি বিশালাকার পুকুর। মিটিং, প্রশিক্ষণ, কর্মশালা এবং ব্রেইন স্টরমিং বৈঠকের ব্যবস্থা। রয়েছে শিশুদের জন্য পুরো কেটারিংয়ের ব্যবস্থা। বিশাল জলাশয় রয়েছে। একটি সুইমিং পুল, একটি ব্যাডমিন্টন কোট ও একটি ডির পার্কও রয়েছে এখানে। অঙ্গনার সবচেয়ে আকর্ষণ হচ্ছে সুন্দরবনের অপরূপ হরিণ। বিশালাকৃতির দুটি খাঁচায় রয়েছে অন্তত ১৬টি হরিণ। সঙ্গে হরিণের বাচ্চাও রয়েছে কয়েকটি। কয়েকটি বাঁশ বাগান পুকুরপাড়ের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে।
রয়েছে মাটির ঘর, আকর্ষণীয় একটি ফোয়ারা ও সুইমিং পুল। যা আগতদের আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে দেয়। এখানে রয়েছে একটি জামে মসজিদ। রয়েছে দুটি সড়কের নামফলক। এর মধ্যে একটি দীনা লায়লা এবং অপরটি এমদাদ স্মরনী। একটি বাংলোয় ১৪টি কক্ষ রয়েছে। আগত দর্শনার্থীদের সার্বক্ষণিক সেবা দিতে ১৮ জন কর্মচারী রয়েছেন। এখানে শ্রীলঙ্কানরা বেশি আসেন। সময় পেলে ঘুরে আসতে পারেন।
যাওয়ার উপায়ঃ
নিজস্ব পরিবহন বা যাত্রীবাহী বাসযোগে গাজীপুর চৌরাস্তা হয়ে ঢাকা-কাপাসিয়া মহাসড়কের পাবুররাস্তা নামক স্থানে নামতে হবে। পরে পাবুররাস্তার মোড় থেকে এক কিলোমিটার দক্ষিণে সূর্যনারায়ণপুর গ্রামে মিলবে অঙ্গনার অবস্থান।
যোগাযোগঃ
অফিসিয়াল ওয়েবসাইট http://anganaresort.com
নুহাশ পল্লী পিরুজ আলী গ্রামে অবস্থিত যা কিনা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গ্রাম। প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ ঢাকার অদূরে গাজীপুরে প্রতিষ্ঠা করেছেন এই প্রাকৃতিক নৈসর্গ নুহাশ পল্লী। গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে হোতাপাড়া বাজার। সেখান থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে পিরুজালী গ্রামে অবস্থিত নুহাশ পল্লী যা ৪০ বিঘা জায়গা নিয়ে তৈরি। একেবারে জঙ্গলের ভিতরে হঠাৎ করে এক টুকরো পরিচ্ছন্ন উদ্যান। শান্ত সৌম্য পরিবেশ। উপরে লিচু, জাম আর শান্তির প্রতীক জলপাই গাছ। নিচে সবুজ ঘাসের গালিচা। যেন এক টুকরো শান্তি নিকেতন। এইখানে চির নিদ্রায় হুমায়ূন আহমেদ, উত্তরাধুনিক বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তী লেখক।
নুহাশ পল্লীতে যা যা আছে:
এখানে ২৫০ প্রজাতির দূর্লভ ঔষধি গাছ রয়েছে। সবুজ মাঠের মাঝখানে একটি বড় গাছের উপর ছোট ছোট ঘর তৈরি করা হয়েছে। আছে খেজুর বাগান, বাগনের এক পাশে “বৃষ্টি বিলাস” নমে অত্যাধুনিক একটি বাড়ি রয়েছে। নুহাশ পল্লীর আরেক আকর্ষণ “লীলাবতী দীঘি”। দীঘির চারপাশ জুড়ে নানা রকমের গাছ। পুকুরের মাঝখানে একটি দ্বীপ।
এছাড়া এখানে দেখা মিলবে হুমায়ূন আহমেদের আবক্ষ মূর্তি ও সমাধিস্থল, পদ্মপুকুর, সরোবরে পাথরের মৎসকন্যা, প্রাগৈতিহাসিক প্রানীদের অনুকীর্তি সহ আরো অনেক কিছু।
টিকেট মূল্য এবং সময়সূচী:
নুহাশ পল্লী বছর প্রতিদিনে দর্শনার্থীদের জন্যে সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। বিশেষ অনুরোধে মাগরিবের আজান পর্যন্ত সাধারন দর্শনার্থীদের জন্য খোলা রাখা হয়। ১২ বছরের উপরে জনপ্রতি টিকেট লাগবে ২০০ টাকা
তবে বছরের ২ দিন অর্থাৎ ১৩ নভেম্বর ( হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন) এবং ১৯ জুলাই মৃত্যু দিন নুহাশ পল্লী সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকে। এই দুই দিন ঢুকতে কোন টিকেট লাগে না।
ঢাকা থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তরে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের বাঘের বাজার থেকে ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলায় মাওনা ইউনিনে গাজীপুর সাফারি পার্ক বা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কটি অবস্থিত। ভাওয়াল গড়ের ছোট ছোট টিলা ও নিচু ভূমি সমৃদ্ধ বিশাল শালবনে তৈরি করা হয়েছে এই সাফারি পার্ক। ৩৬৯০ একর বিশাল আয়তনের এই পার্ক উপর থেকে দেখার জন্য রয়েছে পর্যবেক্ষন কেন্দ্র। ঢাকার খুব কাছে হওয়ার কারনে আপনি ফ্যামিলি নিয়ে দিনে যেয়ে দিনেই ফিরতে পারবেন। এখানের সবথেকে দারুন বিষয় হলো এখানে আপনি থাকবেন খাঁচার মধ্যে আর বাঘ, সিংহরা আপনার চারপাশে ঘুরে বেড়াবে এমন একটা অনুভূতি পাবেন।
গাজীপুর সাফারি পার্কটিকে ৫টি অংশে বিভক্ত করা হয়েছে । কোর সাফারি, সাফারি কিংডম, বায়োডাইভার্সিটি পার্ক, এক্সটেনসিভ এশিয়ান সাফারি পার্ক এবং বঙ্গবন্ধু স্কয়ার।
সময়সূচী:
সাফারি পার্ক মঙ্গলবার বাদে প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে বিকেলে ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
খাওয়া দাওয়ার সুবিধা:
গাজীপুর সাফারি পার্কে আছে দুটি বিশাল আকার পর্যবেক্ষণ রেস্তোরাঁ, একটির নাম টাইগার রেস্তোরাঁ অপরটি সিংহ পর্যবেক্ষণ রেস্তোরাঁ। এই দুটো রেস্টুরেন্টে বসেই কাচের মধ্যে দিয়ে সিংহ এবং বাঘ দেখতে দেখতে খাওয়াদাওয়া করা যাবে।
যাওয়ার উপায়:
মহাখালী থেকে ভালুকা, ময়মনসিংহ বা শ্রীপুরের বাসে উঠে পরুন। গাজীপুরের বাঘের বাজার নেমে যাবেন। জ্যাম বিবেচনা সাপেক্ষে ২ ঘণ্টা লাগবে। বাস থেকে নেমে রিকশা বা সিএনজি অটোরিকশায় পার্কে যাওয়া যাবে। সময় লাগবে মাত্র ২০ মিনিট।